নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। রাজনীতির পটু হিসেবে পরিচিত রয়েছে তার। তার অনুসারীদের মতে, তিনি একজন জ্ঞানী রাজনীতিক। তবে অন্যদের মতে, তিনি খুব চতুর । আগ বাড়িয়ে কেউ কেউ সুবিধাবাদি বলে ডাকেন তাকে। এ দল ও দল করে লাভবানও হয়েছেন বেশ।
ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু এমন বয়ান গিয়াসের নিজ মুখের। পেশাগতভাবে তার শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও ‘৯০ এর গণ আন্দোলনে পতিত রাষ্ট্রপতি হুমু এরশাদের আমলে তৎকালীন জাতীয় পার্টি নেতা ও চীফ হুইপ এমএ ছাত্তারের অনুকম্পা ছিল তার পক্ষে। জাতীয় পার্টির অনুগ্রহেই গিয়াস হন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। ‘৯১’র নির্বাচনের পর তাকে দেখা যায় পুরোপুরি আওয়ামীলীগার বনতে। কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি গিয়াসকে ‘৯৬ তে আওয়ামীলীগের পার্লামেন্টারী বোর্ড নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনে মনোনয়ন দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত চিল থাবার মত তা কেড়ে নেন আরেক আওয়ামীলীগার শামীম ওসমান। সংসদ সদস্য হওয়ার পর গিয়াসের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন শামীম ওসমান। অভিযোগ রয়েছে, শামীম সিপাহশালাররা গিয়াসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর করে। এদের ভয়ে গিয়াসকে ঢাকায় বাস করতে হতো এমনটা শোনা যায়। ২০০১ এর নির্বাচনের ক’দিন আগে কৃষকলীগের গিয়াস যোগ দেন বিএনপিতে। দলীয় মনোনয়ন কনফার্ম করে যোগ দিলেও তা পেয়ে যায় সিদ্ধিরগঞ্জেরই আরেক নেতা চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী সফর আলী ভুঁইয়া। টিকেট পেয়ে পোস্টার পর্যন্ত সেটে দেন ভুঁইয়া। আনন্দে গাড়ি কিনে দেন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা, সন্ত্রাসীর তকমা পাওয়া জাকির খানকে। তবে ফতুল্লার আলোচিত এক শিল্পপতির ক্যারিশমায় শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের বিএনপি মনোনয়ন জুটে গিয়াসের কপালে। সুত্রের খবর সংসদ সদস্য হবার পর নতুন রুপে আবির্ভুত হন গিয়াস। তার চতুরতার কাছে হার মানে দলের অনেক নেতাকর্মী। সুবিধাবাদি কেউ কেউ তাকে ম্যানেজ করে চললেও একটি বিরাট অংশ তার বিরোধী হয়ে যায়। যেই শিল্পপতির অবদানে তার মনোনয়ন জুটেছিল তার সাথেও দূরত্ব সৃষ্টি হয় গিয়াসের। ঝুট ,ঘাট, হাট, মাঠ সর্বত্র তার বিচরণ শুরু হয় শুধু মাত্র অর্থের টানে। গিয়াসের কপালে জুটে যায় নদী খেকো খেতাব। ওয়ান ইলেভের সময় এর খেসারতও দিতে হয় তাকে। দূর্নীতির ডজন খানেক মামলা মাথায় নিয়ে বেশ কিছু দিন জেল খাটেন তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, এখন গিয়াস উদ্দিন পা বাড়ান বুঝে শুনে। একসময়ের স্কুল শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন এখন অঢেল সম্পদের মালিক। মাস শেষে কোটি টাকা ভাড়ার তহবিল থেকেই আসে তার। তাই ঝুট ঝামেলায় তেমন জড়াননা তিনি। তবে বিএনপির রাজনীতি থেকে এখনও দূরে সরে যাননি গিয়াস। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গিয়াস আপাতত চুপচাপ থাকলেও সময় মতো জ্বলে উঠবে বলে মনে করেন অনেকে। তবে সেই সময় নিজের অনুকুলে থাকলেই তিনি পুরোপুরি মাঠে নামবেন। বিএনপিতেও তার একাধিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেও তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। বেশ ভালোই চলছে তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।